নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাইতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল মাপে কম দেয়াসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেখানকার ডিলার সাইদুর রহমান সিকদারের নামে রেজিষ্টেশন থাকলেও চাল বিতরণ করে ওই এলাকার প্রভাবশালী শেখ শামিম। শেখ শামিমের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। সোমবার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় দুস্থদের প্রত্যেক মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও চরমোনাই ইউনিয়নের পশুরিকাঠিতে ২৬-২৭ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সোমবার সকাল থেকে নিজেদের তৈরী চাল উঠানোর একটি পাত্র দিয়ে মেপে এ চাল বিতরণ করা হয়। পাশে ডিজিটাল মাপার যন্ত্র থাকতেও সেটি ব্যবহার করা হচ্ছে না। বিতরণ করা চাল মেপে দেখা যায়, প্রতি জনকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও প্রতি বস্তায় চাল রয়েছে ২৬-২৭ কেজি। এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে চাল দেয়া হয় না ও কার্ড বতিলের হুমকি দেয় হয়, এমনকি করা হয় লাঞ্ছিতও। তাই এদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- করোনা মহামারির মধ্যে কোন স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চাল বিতরণ করছে শেখ শামিম। সেখানে উপস্থিত খাদ্যবান্ধব কার্ডধারীদের মধ্যে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। তখন কেউই মুখ না খুললেও পরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কার্ডধারী সুবিধাভোগী অভিযোগ করে বলেন, প্রত্যেকবার এরকম কম চাল দেয়। কিছু বলতে গেলেই বিপত্তি ঘটে। হয় কার্ড বাতিল করে দেবে, নয়তো লাঞ্ছিত করবে। এরআগে আরও বেশি টাকা নিতো এবার কম নিচ্ছে। কিন্তু চাল ২৬-২৭ কেজির বেশি পাই না। একটি সূত্র জানায়- শেখ শামিম ক্ষমতার দাপটে নিজের স্বজনদের নামে ৯ টি কার্ড করিয়েছেন। এ সকল কার্ডের চাল তিনি নিজেই ভোগ করে থাকেন। এব্যাপারে ডিলার সাইদুর রহমান সিকদার বলেন, ‘আমি খাদ্যগুদাম থেকে ওই চাল নিয়ে আসি। প্রতিটি বস্তাই অক্ষত অবস্থায় পেয়েছি। বস্তার মধ্যে যে চাল কম আছে তা আমরা জানি না। বস্তার সেলাই খোলাও হয়নি। এ বিষয়ে আপনার কি দরকার? এ বিষয়ে প্রশাসন দেখবে। আপনি ফোন দিয়েছেন কেন।’ চাল কম দেয়ার বিষয়ে জানতে শেখ শামিমের কাছে ফোন করা হলে তিনি বলেন, কোন শালায় বলছে চাল কম দেয়া হয়েছে। যে বলছে চাল কম দিছি সে আমার শালা। চাল ২৮ কেজি করে দিয়েছি। আপনি এসে দেখিয়ে দেন কোন শালায় বলছে চাল কম পাইছে।’ এরপরে তিনি বলেন, গতকাল সাহেবেরহাট থেকে যে সাংবাদিক ভাইরা এসে ঈদ খরচের জন্য টাকা নিয়ে গেছে আপনি কি তাদের মধ্যে ছিলেন? প্রতিউত্তরে না জবাব দিলে তিনি দেখা করার জন্য অনুরোধ করেন। ‘গুদাম থেকে মাপে চাল কম দেওয়া হয়নি’ দাবি করে খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘একটি বস্তায় পাঁচ-ছয় কেজি চাল কম দেওয়া সম্ভব নয়। বস্তা অক্ষত রেখে সেটি থেকে মাল বের করার অনেক পথ আছে। অনেকেই এ বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই বোঝেন।’ এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
Leave a Reply